“আল কুরআন” শব্দটি ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থকে বোঝায়, যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। এটি ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য দিকনির্দেশনার আলোকবর্তিকা।
আল কুরআন শব্দের বিশ্লেষণ:
১. শব্দের মূল অর্থ ও ব্যুৎপত্তি
“আল কুরআন” আরবি ভাষার একটি শব্দগুচ্ছ, যা দুটি অংশে বিভক্ত:
- “আল” (ال): এটি আরবি ভাষায় নির্দিষ্ট নির্দেশক শব্দ, যার অর্থ “দ্য” বা “বিশেষ কিছু”।
- “কুরআন” (القرآن): এটি “قرأ” (ক্বারা’আ) ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ “পড়া”, “তেলাওয়াত করা”, বা “বিচার করা”।
এই দুটি অংশ একত্রে “আল কুরআন” শব্দটি গঠন করে, যার অর্থ “তেলাওয়াতযোগ্য গ্রন্থ” বা “যে গ্রন্থটি বারবার পাঠ করা হয়”। এটি ইঙ্গিত করে যে, কুরআন এমন একটি গ্রন্থ যা পাঠ, অধ্যয়ন ও অনুশীলনের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে।
২. কুরআনের সংজ্ঞা ও ধর্মীয় তাৎপর্য:
ইসলামী পরিভাষায়, “আল কুরআন” হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ একমাত্র ঐশী গ্রন্থ, যা হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট পৌছানো হয়েছে। এটি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান।
কুরআন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا ٱلذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَـٰفِظُونَ
“নিশ্চয়ই আমিই এ কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।” (সূরা হিজর: ৯)
৩. কুরআনের অন্যান্য নাম:
কুরআন নিজেই বিভিন্ন জায়গায় নিজের অন্যান্য নাম উল্লেখ করেছে। যেমন—
- আল ফুরকান (الفرقان): সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।
- আল কিতাব (الكتاب): লিখিত গ্রন্থ।
- আল হুদা (الهدى): পথপ্রদর্শক।
- আল নূর (النور): আলো।
- আল রহমাহ (الرحمة): করুণা।
এগুলো কুরআনের গুণ ও বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়।
৪. কুরআনের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব:
- আল্লাহর কালাম: এটি আল্লাহর বাণী, যা পরিবর্তনযোগ্য নয়।
- সর্বশেষ গ্রন্থ: এটি পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাবের সমাপ্তি এবং পূর্ণতা।
- নিয়ম ও বিধান: কুরআনে জীবন পরিচালনার সকল বিধান রয়েছে।
- বিজ্ঞান ও জ্ঞানের উৎস: কুরআনে মহাবিশ্ব, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে বহু তথ্য রয়েছে।
উপসংহার:
“আল কুরআন” শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এক অনন্য জীবনবিধান। এটি শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা, যা আমাদের ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনের সঠিক পথ দেখায়। অতএব, কুরআনের শিক্ষা অনুসরণ করাই সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর।