ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আজকাল অনলাইন শপিং একটি সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো “ক্যাশ অন ডেলিভারি” বা সিওডি বা প্রদানোত্তর পরিশোধ। এই পদ্ধতি ক্রেতাদের একটি নির্ভরযোগ্য ও সহজ উপায়ে কেনাকাটার সুযোগ দেয়।
ক্যাশ অন ডেলিভারি(COD):
“ক্যাশ অন ডেলিভারি” শব্দটি ইংরেজি থেকে নেওয়া হলেও এর কার্যপদ্ধতি খুবই সাধারণ। এটি এমন একটি পেমেন্ট পদ্ধতি যেখানে ক্রেতা তার অর্ডার করা পণ্য হাতে পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করে। অর্থাৎ, পণ্যটি তার কাছে পৌঁছে গেলে তবেই সে টাকা প্রদান করবে।
ক্যাশ অন ডেলিভারির প্রক্রিয়া:
১. অর্ডার দেওয়া: ক্রেতা অনলাইনে একটি পণ্য নির্বাচন করে এবং অর্ডার সম্পন্ন করে।
২. পেমেন্ট অপশন নির্বাচন: ক্রেতা পেমেন্ট মেথড হিসেবে “ক্যাশ অন ডেলিভারি” নির্বাচন করে।
৩. ডেলিভারি প্রসেসিং: বিক্রেতা পণ্যটি প্যাকেজ করে নির্ধারিত ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
৪. পণ্য গ্রহণ ও পেমেন্ট: ক্রেতা পণ্য হাতে পাওয়ার পর মূল্য প্রদান করে।
ক্যাশ অন ডেলিভারির সুবিধা:
১. নিরাপত্তা:
এটি ক্রেতাদের জন্য একটি নিরাপদ পেমেন্ট পদ্ধতি। পণ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ না করার সুযোগ থাকায় প্রতারণার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
২. সরাসরি যাচাইয়ের সুযোগ:
পণ্য গ্রহণের সময় ক্রেতা সেটি যাচাই করে দেখতে পারে। যদি পণ্যের মান বা পরিমাণে কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে ক্রেতা সেটি গ্রহণ না করেই ফিরিয়ে দিতে পারে।
৩. কার্ড বা ডিজিটাল পেমেন্ট প্রয়োজন নেই:
অনেক ক্রেতারই হয়তো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নেই। এই পদ্ধতিতে তারা সহজেই নগদ অর্থ দিয়ে কেনাকাটা করতে পারে।
৪. প্রতারণা এড়ানোর সুযোগ:
অনেক সময় অনলাইন পেমেন্টে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে অর্থ আটকে যায় বা অপ্রত্যাশিতভাবে কেটে নেওয়া হয়। “ক্যাশ অন ডেলিভারি” এই ঝুঁকি এড়াতে সহায়ক।
ক্যাশ অন ডেলিভারির অসুবিধা:
১. ফেরতের জটিলতা:
যদি পণ্য গ্রহণের পরে ত্রুটি ধরা পড়ে, তবে সেটি ফেরত দেওয়া বা পরিবর্তন করা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল হতে পারে।
২. ডেলিভারি চার্জ বৃদ্ধি:
“ক্যাশ অন ডেলিভারি” পরিষেবার জন্য অনেক সময় অতিরিক্ত ডেলিভারি চার্জ আরোপ করা হয়।
৩. বিক্রেতার ঝুঁকি:
বিক্রেতার জন্য এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি। ক্রেতা যদি পণ্য গ্রহণ না করে, তবে বিক্রেতা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
প্রদানোত্তর পরিশোধ এর জনপ্রিয়তা:
বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে “ক্যাশ অন ডেলিভারি” অত্যন্ত জনপ্রিয়। দেশটির অধিকাংশ মানুষ এখনো ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় পুরোপুরি অভ্যস্ত নয়। তাই নগদ অর্থ প্রদানের এই পদ্ধতি তাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য।
বাংলাদেশের বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো:
দেশের বড় বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যেমন, দারাজ, ইভ্যালি (বর্তমানে বন্ধ), চaldal.com ইত্যাদি ক্রেতাদের সুবিধার জন্য “ক্যাশ অন ডেলিভারি” সেবা প্রদান করে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ক্যাশ অন ডেলিভারি:
অন্যান্য দেশেও “ক্যাশ অন ডেলিভারি” প্রচলিত। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই পদ্ধতি জনপ্রিয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সিওডি:
উন্নত দেশগুলোতে এটি ততটা প্রচলিত নয়। কারণ সেসব দেশে ক্রেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্ড বা মোবাইল পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
উপসংহার:
“ক্যাশ অন ডেলিভারি” একটি ব্যবহারকারীবান্ধব পদ্ধতি, যা ক্রেতাদের বিশ্বাস ও আরামের সুযোগ দেয়। তবে সময়ের সাথে সাথে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবুও, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এই পদ্ধতির গুরুত্ব এখনো অপরিসীম। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই সুবিধা ও অসুবিধার দিকগুলো বিবেচনা করে এই সিস্টেমকে আরও উন্নত করা যেতে পারে।