স্বৈরাচারী শব্দটি একটি নেতিবাচক অর্থবোধক শব্দ, যা রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। স্বৈরাচারী বলতে সাধারণত এমন এক ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি সম্পূর্ণ ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করে এবং আইন, নীতি, অথবা জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে শাসন করেন। এই ধরনের শাসনব্যবস্থা স্বৈরতন্ত্র নামে পরিচিত।
স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :
১. একক ক্ষমতা: স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় সব ক্ষমতা একজন নেতার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। এই নেতা কোনো বাধা বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই শাসন করেন।
২. আইনের অগ্রাহ্য: স্বৈরাচারী শাসকরা প্রায়শই তাদের স্বার্থে আইন পরিবর্তন বা বাতিল করে এবং আইনের শাসনকে মান্য করে না।
- মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ: স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকে। সমালোচনা বা বিরোধিতার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
- নির্বাচনহীনতা: স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় সাধারণত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয় না। নেতারা নিজ ক্ষমতায় বা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকে।
- ভীতি প্রদর্শন: শাসকরা জনগণকে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ জন্য প্রায়শই সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার ব্যবহার হয়।
আরো জানুনঃ>>> ফ্যাসিবাদী মানে কি
স্বৈরাচারীর উদাহরণ :
স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ:
- আদলফ হিটলার: নাৎসি জার্মানির নেতা হিটলার একজন স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন। তার শাসনামলে তিনি গণহত্যা, যুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বহু অপরাধ করেছেন।
- জোসেফ স্টালিন: সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা স্টালিনও একজন স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন। তার শাসনামলে বহু মানুষ রাজনৈতিক শুদ্ধির শিকার হয়েছিলেন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতির কারণে বহু মানুষ দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
- কিম জং-উন: বর্তমান উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনও একজন স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে পরিচিত। তার শাসনামলে দেশটির জনগণ কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে এবং স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নেই।
স্বৈরাচারী শাসনের ফলাফল :
স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা সাধারণত সমাজের জন্য ক্ষতিকারক হয়। এর ফলে যে সমস্যাগুলি দেখা যায় তা হলো:
- মানবাধিকার লঙ্ঘন: স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো লঙ্ঘিত হয়। স্বাধীন মত প্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা প্রায়শই সীমিত বা বন্ধ থাকে।
- অর্থনৈতিক দুরবস্থা: স্বৈরাচারী শাসনের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীরগতিতে হয় এবং বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- সমাজে অস্থিরতা: স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। এটি প্রায়শই প্রতিবাদ, বিদ্রোহ এবং সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিরোধের উপায় :
স্বৈরাচারী শাসন প্রতিরোধ করার জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে:
- গণতন্ত্রের বিকাশ: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রণয়ন ও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিরোধ করা যায়। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- আইনের শাসন: আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে যাতে স্বৈরাচারী শাসকরা নিজেদের স্বার্থে আইন পরিবর্তন করতে না পারে।
- মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা: মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে যাতে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠতে পারে।
- সুশীল সমাজের ভূমিকা: সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য।
উপসংহার :
স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা মানুষের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। এটি সমাজে অস্থিরতা ও দুরবস্থা সৃষ্টি করে। তাই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সুশীল সমাজের সক্রিয় ভূমিকা এই প্রতিরোধ গড়ে তোলার মূল উপায় হতে পারে। একটি স্বৈরাচারী শাসনমুক্ত সমাজ গড়তে সকলের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ জরুরি।