‘হামাস’ (Hamas) শব্দটির মূল উৎপত্তি আরবি ভাষা থেকে, যার অর্থ হলো ‘উৎসাহ’ বা ‘উদ্দীপনা’। এটি ‘Harakat al-Muqawama al-Islamiya’ (حرکة المقاومة الإسلامية) বা ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত রূপ। হামাস একটি ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন, যা ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনকে ইসরায়েলি দখল থেকে মুক্ত করা এবং সেখানে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যার ভিত্তি হবে ইসলামিক আইন।
হামাসের উৎপত্তি:
হামাসের প্রতিষ্ঠা হয় প্রথম ইন্তিফাদার সময়, যা ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনের জনগণ ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণপ্রতিরোধ শুরু করে। এই সময়েই হামাসের জন্ম হয় ফিলিস্তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখা হিসাবে। ইসলামী নীতির ওপর ভিত্তি করে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও সামরিক স্বাধীনতার জন্য কাজ করা হামাসের মূল লক্ষ্য। ইসরায়েলের সাথে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পর, হামাস নিজেকে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে প্রতিরোধের একটি মুখ্য সংগঠন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আদর্শ এবং লক্ষ্য:
হামাসের আদর্শ মূলত ইসলামিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত। এর রাজনৈতিক মতাদর্শ ইসলাম ধর্মের নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে। তারা মনে করে, ফিলিস্তিন একটি মুসলিম ভূখণ্ড এবং সেখানে ইসরায়েলের কোনো অবস্থান থাকতে পারে না। হামাসের লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনের মুক্তি এবং সেখানে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সংগঠনটি সাধারণত রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সামরিক কাজের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে।
রাজনৈতিক ও সামরিক শাখা:
হামাসের দুটি প্রধান শাখা রয়েছে: ১. রাজনৈতিক শাখা: হামাস ফিলিস্তিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং জনগণের মধ্যে তাদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য সামাজিক কাজেও নিয়োজিত থাকে। ২০০৬ সালে হামাস গাজা উপত্যকার নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং সেখানে সরকার গঠন করে।
২. সামরিক শাখা: হামাসের সামরিক শাখার নাম ‘ইয্যাদ্দীন আল-কাসাম ব্রিগেড’। এই শাখাটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করে। হামাস প্রায়ই রকেট হামলা, আত্মঘাতী হামলা, এবং অন্যান্য সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
হামাসের কর্মকাণ্ড:
হামাসের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের সাথে সংঘর্ষ, গাজার অবরোধের বিরুদ্ধে লড়াই, এবং ফিলিস্তিনের জনগণের সহায়তার জন্য বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প পরিচালনা। সংগঠনটি হাসপাতাল, স্কুল, এবং বিভিন্ন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে তাদের সামরিক কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যদিও মুসলিম বিশ্বে তাদের সমর্থক সংখ্যা কম নয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
হামাসের সামরিক কার্যক্রম এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশ ও গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থন দিয়ে থাকে। হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের কারণে গাজার জনগণ বহু বছর ধরে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।
সমাপ্তি:
হামাস একটি বিতর্কিত এবং বহুমুখী সংগঠন, যা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের আদর্শ এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে যেমন অনেক সমালোচনা রয়েছে, তেমনি সমর্থনও রয়েছে। ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মুক্তি এবং একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন হামাস লালন করছে, তা ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।