অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলতে এমন একটি সরকারকে বোঝানো হয় যা নিয়মিত নির্বাচনের আগে বা পরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করে। এ ধরনের সরকার সাধারণত তখন গঠন করা হয় যখন নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হয় এবং নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শূন্যস্থান পূরণ করতে হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব হলো:
- নিরপেক্ষতা রক্ষা করা: নির্বাচনের সময়কালীন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
- সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা: নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচন পরিচালনা করা।
- সাধারণ প্রশাসনিক কার্যাবলী সম্পাদন: দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম বজায় রাখা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন ও কার্যপ্রণালী :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাধারণত বিদায়ী সরকারের সদস্য বা স্বাধীন ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়। এক্ষেত্রে, বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কিছু মন্ত্রিপরিষদের সদস্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করেন অথবা সম্পূর্ণ নতুন ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারও গঠন করা হতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যপ্রণালী স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া জরুরি। তাদের প্রধান কাজ হলো নির্বাচনের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করা। এর জন্য তারা বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট :
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধারণা প্রথম আসে ১৯৯১ সালে, যখন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর পরে, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব পালন করবে এবং তাদের কাজ হবে নির্বাচন পরিচালনা করা।
তবে, ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। বর্তমানে, নির্বাচনকালীন সময়ে বিদায়ী সরকারই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে। এই পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং অনেক রাজনৈতিক দল এটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
আরো জানুনঃ>>> ফ্যাসিবাদী মানে কি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুবিধা ও অসুবিধা :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান সুবিধা হলো এটি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সহায়ক। এটি রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমান সুযোগ সৃষ্টি করে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে কোন একটি দলের প্রভাব প্রতিরোধ করে।
তবে, এ ধরনের সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যরা সাধারণত নির্বাচিত নয়, তাই তাদের জবাবদিহিতার অভাব থাকতে পারে। এছাড়া, তাদের কার্যকালীন সময়ে নীতি গ্রহণ বা উন্নয়নমূলক কাজ করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
উপসংহার :
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যা একটি দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সহায়ক। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমান সুযোগ তৈরি হয় এবং নির্বাচনকালীন সময়ে প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। যদিও এ ধরনের সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।