ইসকন অর্থ কি

ইসকন (ISKCON) শব্দটি মূলত একটি ইংরেজি সংক্ষিপ্ত রূপ, যার পুরো অর্থ হলো International Society for Krishna Consciousness। বাংলায় এটি পরিচিত হয় “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ” নামে। এটি একটি বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সংগঠন, যার মূল লক্ষ্য হলো কৃষ্ণভাবনায় উদ্বুদ্ধ করে সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করা। অনেকের মতে এটি ভারতীয় একটি উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন। (সুত্রঃ উইকিপিডিয়া )

ইসকনের উৎপত্তি ও প্রতিষ্ঠা :

ইসকনের প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। তিনি একজন বিশিষ্ট বৈষ্ণব গুরু এবং চৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তি আন্দোলনের আধুনিক প্রচারক। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রভুপাদের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় ভক্তি-সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষকে শ্রীকৃষ্ণের চেতনার সাথে যুক্ত করা।

ইসকনের মূলনীতি :

ইসকনের মূল লক্ষ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভগবদ্‌গীতার শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই সংগঠন মূলত ভক্তি যোগের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শুদ্ধ ভক্তি প্রদর্শন এবং কৃষ্ণের মহিমা প্রচার করে। তাদের প্রধান লক্ষ্যগুলো হলো—

  1. শ্রীকৃষ্ণের জ্ঞান প্রচার করা: শ্রীকৃষ্ণকে জীবের চূড়ান্ত আরাধ্য হিসেবে উপস্থাপন।
  2. ভগবদ্‌গীতার শিক্ষা প্রচার করা: ভগবদ্‌গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতের নির্দেশনা অনুযায়ী মানবজীবনের আদর্শ গঠন।
  3. ভক্তি যোগ প্রচলন: হরেকৃষ্ণ মন্ত্রজপ ও ভক্তি সাধনার মাধ্যমে কৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করা।
  4. ভক্তদের সেবা: ভগবানের ভক্তদের সেবা করা, যা প্রকৃত ভক্তির প্রকাশ।
  5. আধ্যাত্মিক জীবনধারা শেখানো: নিরামিষভোজ, সততা, অহিংসা, এবং নৈতিকতা প্রচার করা।

ইসকনের কার্যক্রম :

ইসকন বিশ্বব্যাপী কৃষ্ণভাবনামৃত ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • কীর্তন ও মন্ত্রজপ: সংগঠনের মূল আকর্ষণ হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের জপ ও গানের মাধ্যমে ভক্তি প্রদর্শন।
  • বিনামূল্যে প্রসাদ বিতরণ: ইসকন বিভিন্ন দেশে ভক্তদের জন্য খাদ্য বিতরণ করে, যা “ফুড ফর লাইফ” প্রকল্পের অংশ।
  • শিক্ষা কার্যক্রম: ইসকন স্কুল ও কলেজে আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রদান করে।
  • ধর্মগ্রন্থ প্রচার: শ্রীমদ্ভাগবত, ভগবদ্‌গীতা, এবং অন্যান্য গ্রন্থের অনুবাদ ও প্রচার।
  • মন্দির প্রতিষ্ঠা: ইসকনের বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মন্দির রয়েছে, যা ভক্তি চর্চার কেন্দ্র।
আরো জানুন >>  স্বাক্ষর শব্দের অর্থ কি

ইসকনের গুরুত্ব :

ইসকন একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন যা মানুষকে আধুনিক জীবনের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক। এটি মানবজাতিকে কৃষ্ণভাবনার মাধ্যমে শান্তি ও সুখ অর্জনের পথ দেখায়। ইসকনের দৃষ্টিতে, কৃষ্ণভক্তি কেবল ধর্ম নয়, এটি একটি জীবনধারা।

বাংলাদেশে ইসকন :

বাংলাদেশেও ইসকনের উপস্থিতি বিশাল। দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ইসকনের মন্দির ও আশ্রম রয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, এবং সিলেটের মন্দিরগুলো ভক্তদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। এখানে নিয়মিত কীর্তন, ধর্মীয় আলোচনা, এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

ইসকনের সমালোচনা :

যদিও ইসকন অনেকের কাছে ভক্তি এবং আধ্যাত্মিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তবে এর সমালোচনার দিকও রয়েছে। কিছু মানুষ এটিকে ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতির আধিপত্যের একটি মাধ্যম হিসেবে দেখে। এছাড়াও, ইসকনের আর্থিক কার্যক্রম ও সদস্যদের কঠোর নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

উপসংহার :

ইসকন একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন যা কৃষ্ণভাবনার প্রচারে বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে। এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিকতার উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসকন কেবল ভগবানের আরাধনা নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ জীবনধারা, যা মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।

Leave a Comment