পাইলস কি এবং কেন হয় ?

পাইলস বা হেমোরয়েডস হলো একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা আমাদের মলদ্বার এবং রেকটামের চারপাশের রক্তবাহিকায় প্রদাহ ও ফোলাভাব সৃষ্টি করে। এই রোগটি সাধারণত মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরে রক্তবাহিকার ফোলাভাবের কারণে হয়। পাইলসের কারণে অসুবিধা এবং ব্যথা হতে পারে, এবং কখনো কখনো রক্তপাতও হতে পারে।

পাইলসের প্রকারভেদ :

পাইলস সাধারণত দুটি প্রকারের হতে পারে:

  1. অভ্যন্তরীণ পাইলস: এটি মলদ্বারের ভেতরে রেকটামের মধ্যে গঠন হয়। অভ্যন্তরীণ পাইলস সাধারণত তেমন ব্যথা সৃষ্টি করে না, কারণ রেকটামের ভেতরে খুব কম নার্ভ শেষ থাকে। তবে, মলের সাথে রক্তপাত হতে পারে।
  2. বাহ্যিক পাইলস: এটি মলদ্বারের বাইরে গঠন হয় এবং এর ফলে সাধারণত ব্যথা, চুলকানি এবং অস্বস্তি হয়। বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের চারপাশে গঠন হয় যেখানে অনেক বেশি নার্ভ শেষ থাকে, ফলে এটি বেশ বেদনাদায়ক হতে পারে।

পাইলস কেন হয় :

পাইলস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ নিম্নরূপ:

  1. কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এবং কঠিন মল ত্যাগ করতে গেলে মলদ্বারের রক্তবাহিকায় চাপ পড়ে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
  2. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: বিশেষ করে টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকা মলদ্বারের রক্তবাহিকায় চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  3. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় মহিলাদের পাইলসের ঝুঁকি বাড়ে কারণ গর্ভের ভেতরে বেড়ে ওঠা শিশুর ওজন পেটের রক্তবাহিকায় চাপ সৃষ্টি করে।
  4. মোটা হওয়া: অতিরিক্ত ওজন হলে মলদ্বারের রক্তবাহিকায় চাপ পড়ে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
  5. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: কম ফাইবারযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে এবং পানি কম পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে, যা পাইলসের কারণ হতে পারে।
  6. বংশগত কারণ: পরিবারের মধ্যে কারও পাইলস থাকলে, বংশগতভাবে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আরো জানুন >>  থার্টি ফার্স্ট নাইট মানে কি ? সম্পূর্ণ ইতিহাস জেনে নিন

পাইলসের লক্ষণ :

পাইলসের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. রক্তপাত: মলের সাথে রক্তপাত হওয়া পাইলসের একটি প্রধান লক্ষণ।
  2. ব্যথা ও অস্বস্তি: মল ত্যাগের সময় বা পরে ব্যথা এবং অস্বস্তি হওয়া।
  3. চুলকানি: মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি অনুভব করা।
  4. ফোলাভাব: মলদ্বারের চারপাশে ফোলাভাব বা গুটির মত অনুভব করা।
  5. মলের সাথে শ্লেষ্মা: মলের সাথে শ্লেষ্মা নিঃসৃত হওয়া।

পাইলসের প্রতিকার :

পাইলসের প্রতিকার এবং প্রতিরোধে কিছু সাধারণ পরামর্শ:

  1. ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য: ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন ফল, সবজি, এবং পুরো শস্য গ্রহণ করুন। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
  2. পর্যাপ্ত পানি পান: দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। এটি মলকে নরম রাখবে এবং মলত্যাগ সহজ করবে।
  3. নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করবে।
  4. টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন: টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
  5. ভালো হাইজিন মেনে চলুন: মলদ্বারের চারপাশ পরিষ্কার এবং শুকনো রাখুন।
  6. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলুন।

চিকিৎসা :

পাইলসের চিকিৎসা বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যেতে পারে:

  1. ঔষধ: ব্যথা এবং চুলকানি উপশমের জন্য বিভিন্ন ঔষধ এবং ক্রিম পাওয়া যায়।
  2. স্ক্লেরোথেরাপি: এই পদ্ধতিতে রক্তবাহিকায় বিশেষ ইনজেকশন দিয়ে পাইলস সংকুচিত করা হয়।
  3. রাবার ব্যান্ড লাইগেশন: এই পদ্ধতিতে পাইলসের গোড়ায় রাবার ব্যান্ড লাগানো হয়, যা রক্ত চলাচল বন্ধ করে এবং পাইলস শুকিয়ে যায়।
  4. সার্জারি: মারাত্মক ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
আরো জানুন >>  তাগুত অর্থ কি

পাইলস হলো একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনও লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Comment