রিসালাত শব্দের অর্থ কি

“রিসালাত” (رسالت) একটি গুরুত্বপূর্ণ আরবি শব্দ, যা মূলত ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত “বার্তা”, “পয়গাম”, বা “দূতত্ব” বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ধর্মীয় অর্থে, “রিসালাত” শব্দটি নবীদের ওপর নাযিলকৃত আল্লাহর বাণীর বাহক হওয়ার দায়িত্বকে নির্দেশ করে। ইসলাম ধর্মে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা নবুওয়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

রিসালাত শব্দের অর্থ :

“রিসালাত” শব্দটি আরবি “رسل” (র-স-ল) ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো “পাঠানো” বা “প্রেরণ করা”। শব্দটির সাধারণ অর্থ হলো বার্তা বা সংবাদ প্রেরণ করা। তবে ইসলামে এটি বিশেষ অর্থ বহন করে, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীদের প্রতি অবতীর্ণ বার্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।

রিসালাতের সাধারণ অর্থ:

১. বার্তা বা সংবাদ
২. দূতত্ব বা দূতের কাজ
৩. কোনো বিশেষ দায়িত্ব বা মিশন

ইসলামী পরিভাষায় রিসালাতের অর্থ:

১. নবী ও রাসুলগণের ওপর আল্লাহর বার্তা নাযিল হওয়া
2. মানুষকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা প্রদান করা
৩. আল্লাহর বিধান প্রচার করা

ইসলামে রিসালাতের গুরুত্ব :

ইসলাম ধর্মে “রিসালাত” একটি মৌলিক বিশ্বাসের অংশ। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসুলদের মাধ্যমে তাঁর বার্তা মানবজাতির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে যে, নবীদের প্রধান দায়িত্ব ছিল এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং তাদের সঠিক পথনির্দেশ প্রদান করা।

রিসালাতের মূল দিকসমূহ:

১. আল্লাহর বার্তা: নবীগণ সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে ওহি গ্রহণ করেছেন এবং তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
২. মানবজাতির কল্যাণ: রিসালাত কেবল ধর্মীয় উপদেশ নয়, বরং এটি সামাজিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নির্দেশনা প্রদান করে।
৩. সর্বশেষ রিসালাত: ইসলামের মতে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বশেষ রাসুল, এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর চূড়ান্ত বার্তা পৃথিবীতে এসেছে।

আরো জানুন >>  উলম্ব মানে কি

রিসালাত ও নবুওয়াতের পার্থক্য :

অনেকেই “রিসালাত” ও “নবুওয়াত” শব্দদ্বয়কে একই মনে করেন, কিন্তু এর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে:

রিসালাত নবুওয়াত
বার্তা বা বার্তাবাহকের দায়িত্ব নবীর অবস্থান ও কর্তব্য
রাসুলগণ আল্লাহর বার্তা নিয়ে আসেন নবীগণ পূর্ববর্তী বার্তা অনুসরণ করেন
প্রত্যেক রাসুল নবী, কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসুল নাও হতে পারেন সব নবী রাসুল নন

কুরআন ও হাদিসে রিসালাত :

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“তিনি তাঁর রাসূলগণের মাধ্যমে মানুষের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও কিতাব পাঠিয়েছেন, যাতে মানুষ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।” (সুরা বাকারা: ২১৩)

এছাড়াও, হাদিসেও রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আমি তোমাদের কাছে এমন এক সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা নিয়ে এসেছি, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” (বুখারি, মুসলিম)

উপসংহার :

“রিসালাত” কেবল ধর্মীয় ধারণা নয়, বরং এটি মানুষের জীবন ও সমাজের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসলামে এটি নবীদের কর্তব্য ও দায়িত্বের অন্যতম প্রধান দিক। মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী ও রাসুলদের মাধ্যমে মানুষকে সত্য ও কল্যাণের পথে আহ্বান করেছেন। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে এই রিসালাত পূর্ণতা লাভ করেছে, যা কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে থাকবে।

Leave a Comment