“রজম” (رجْم) শব্দটি আরবি ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, যা ইসলামী পরিভাষায় বিভিন্ন অর্থ বহন করে। মূলত, “রজম” শব্দের অর্থ হলো পাথর নিক্ষেপ করা, অভিশাপ দেওয়া, অথবা বহিষ্কার করা। এটি কুরআন, হাদিস ও ইসলামী শরিয়তে বিভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই শব্দের ব্যাখ্যা ও প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে হলে এটি কোন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানা জরুরি। ইসলামে “রজম” সাধারণত দুটি প্রসঙ্গে বেশি ব্যবহৃত হয়:
- শয়তানকে রজম করা (পাথর নিক্ষেপ করা ও অভিশাপ দেওয়া)
- ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে রজম
রজম শব্দের অর্থ:
“রজম” (رجْم) শব্দটি আরবি “র-জ-ম” (ر-ج-م) মূলধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ পাথর মারা, অভিশাপ দেওয়া, বা দূর করে দেওয়া। ইসলামিক পরিভাষায় এটি সাধারণত শাস্তি প্রদান বা শয়তানকে তাড়ানোর একটি প্রতীকী কাজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রজম শব্দের ব্যবহার ও তাৎপর্য:
১. শয়তানকে রজম করা:
কুরআন ও হাদিসে “রজম” শব্দটি শয়তানকে অভিশাপ দেওয়া এবং তাড়িয়ে দেওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
(ক) কুরআনে শয়তানকে রজম করার উল্লেখ:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ
“নিশ্চয়ই আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালায় সজ্জিত করেছি এবং একে শয়তানের প্রতি নিক্ষিপ্ত অস্ত্র বানিয়েছি।” (সূরা মুলক: ৫)
এখানে “রজম” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে শয়তানকে বিতাড়নের অর্থে। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহর পক্ষ থেকে আগুনের শিখা নিক্ষেপের মাধ্যমে শয়তানদের আকাশের খবর শোনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করা হয়।
(খ) হজে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ (রজম) করা:
হজের সময় মিনায় “শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ” বা “রজম” করা হয়। এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“তোমরা শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করো, কেননা এটি ইবরাহিম (আ.) এর সুন্নত।” (তিরমিজি)
হজের সময় মিনার জামারায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করা হয়, যা শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতীকী যুদ্ধ এবং আত্মশুদ্ধির প্রতীক।
২. ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে রজম:
ইসলামে শাস্তি হিসেবে “রজম” কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে বিবাহিত ব্যভিচারীদের জন্য শাস্তি হিসাবে। ইসলামী শরিয়তে বিবাহিত পুরুষ বা নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হলে, উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদেরকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড (রজম) দেওয়া হয়।
(ক) হাদিসে রজমের বিধান:
হযরত উমর (রা.) বলেন:
“নিশ্চয়ই, রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যভিচারী বিবাহিত পুরুষ ও নারীর জন্য রজমের শাস্তির হুকুম দিয়েছেন।” (বুখারি, মুসলিম)
(খ) ইসলামী শরিয়তে রজমের শর্ত:
১. অভিযুক্ত ব্যক্তি বিবাহিত হতে হবে।
2. অপরাধ চারজন প্রত্যক্ষদর্শী দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে।
3. অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অপরাধ স্বীকার করলে শাস্তি কার্যকর হতে পারে।
এই শর্তগুলো কঠোর হওয়ায় ইসলামের ইতিহাসে খুব কম ক্ষেত্রেই রজমের শাস্তি কার্যকর হয়েছে।
রজমের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক:
ইতিবাচক দিক:
- শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতীকী যুদ্ধ হিসেবে হজে “রজম” আত্মশুদ্ধির অংশ।
- শয়তান থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।
- ইসলামে কঠোর শাস্তির মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়।
নেতিবাচক দিক (সমালোচনার দৃষ্টিকোণ থেকে):
- অনেক সমালোচক মনে করেন, রজম শাস্তি কঠোর। তবে ইসলামে এটি খুবই কঠিন শর্তের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।
- কিছু ভুল ব্যাখ্যার কারণে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয়।
উপসংহার:
“রজম” শব্দটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ, যার অর্থ পাথর নিক্ষেপ, অভিশাপ দেওয়া এবং দূর করে দেওয়া। এটি মূলত শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতীকী লড়াই ও শরিয়তের কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে “রজম” আত্মশুদ্ধি, অপরাধ দমন এবং ন্যায়ের প্রতীক।