[wpseo_breadcrumb]

বাগদত্তা মানে কি

‘বাগদত্তা’ শব্দটি একটি বাংলা শব্দ, যা দুটি অংশে বিভক্ত—‘বাগ’ এবং ‘দত্তা’। ‘বাগ’ বলতে বোঝায় ‘বাগদান’, যা বিয়ের প্রতিশ্রুতির সাথে সম্পর্কিত একটি প্রথা বা রীতি। ‘দত্তা’ শব্দটি এখানে ‘দেওয়া’ বা ‘প্রদত্ত’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, বাগদত্তা বলতে বোঝানো হয় সেই নারীকে, যিনি বিয়ের পূর্বে কোনো পুরুষের সাথে বাগদান বা বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয়েছেন। এই শব্দের পুরুষ রূপ হলো ‘বাগদত্ত’, যা সেই পুরুষকে বোঝায়, যিনি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বাগদত্তা শব্দের ব্যাখ্যাঃ

বাগদত্তা একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় প্রথার সাথে সম্পর্কিত। এটি মূলত বিয়ের প্রাথমিক পর্ব, যেখানে দুই পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে একে অপরকে বিয়ে করার অঙ্গীকার করে। এটি বেশিরভাগ সমাজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বিয়ের প্রক্রিয়াকে আরও নিশ্চিত করে।

বাগদত্তা হওয়ার অর্থ হলো:

  1. প্রতিশ্রুতি: একজন নারীকে তার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী হিসেবে চিহ্নিত করা।
  2. সামাজিক স্বীকৃতি: এই সম্পর্কটি সমাজ ও পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং স্বীকৃত।
  3. সম্পর্কের সূচনা: এটি দু’জন মানুষের নতুন জীবনের শুরুর প্রতীক।

বাগদত্তার সাংস্কৃতিক গুরুত্বঃ

বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে বাগদান বা এনগেজমেন্ট একটি প্রচলিত প্রথা। এটি সাধারণত বিয়ের আগে দুটি পরিবারের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে পালিত হয়। এই প্রথার মধ্য দিয়ে পরিবারগুলো একে অপরের সাথে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে এবং বিয়ের দিন নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বাগদত্তা হওয়ার আনুষ্ঠানিকতাঃ

১. বাগদান অনুষ্ঠান:

  • দুই পরিবারের সম্মতিতে একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা হয়।
  • এই অনুষ্ঠানে উপহার আদান-প্রদান এবং প্রথাগত রীতি অনুসরণ করা হয়।
আরো জানুন >>  আলহাজ শব্দের অর্থ কি

২. প্রতিশ্রুতির বিনিময়:

  • উভয়পক্ষ একে অপরের কাছে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।
  • কখনো কখনো আংটি বা অন্য প্রতীকী উপহার প্রদান করা হয়।

৩. সমাজের কাছে ঘোষণা:

  • বাগদান সম্পন্ন হলে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে এই সম্পর্কের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিঃ

বাগদত্তা সম্পর্কটি ধর্মীয় দৃষ্টিতেও গুরুত্ব বহন করে। ইসলাম ধর্মে বাগদানকে ‘খুতবা’ বলা হয়। এটি বিয়ের আগে একটি অনুমোদিত এবং স্বীকৃত ধাপ। হিন্দু ধর্মে বাগদান অনুষ্ঠানকে ‘শগুন’ বা ‘পাকা কথা’ বলা হয়, যা দুটি পরিবারের মধ্যে বন্ধনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত।

বাগদত্তা এবং আধুনিক সমাজঃ

বর্তমান যুগে বাগদত্তা শব্দটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে আরও আধুনিক রূপ পেয়েছে। আগে যেখানে এটি শুধু পারিবারিকভাবে নির্ধারিত হতো, এখন অনেক ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর সম্মতি ও পছন্দকেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আধুনিক প্রভাবঃ

  1. ব্যক্তিগত পছন্দ: পাত্র-পাত্রী নিজের পছন্দে একে অপরকে বেছে নেন।
  2. সমান অধিকার: উভয়পক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
  3. বাগদান উদযাপন: আধুনিক সমাজে বাগদানকে একটি বড় অনুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করা হয়, যা ফ্যাশন এবং সামাজিকতার একটি অংশ হয়ে উঠেছে।

বাগদত্তার মানসিক ও সামাজিক প্রভাবঃ

বাগদত্তা হওয়ার ফলে একজন নারীর জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে:

  1. মানসিক প্রস্তুতি: বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের জন্য তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুত হন।
  2. সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি: সমাজে তাকে একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নারী হিসেবে দেখা হয়।
  3. পরিবারের ভূমিকা: বাগদত্তা হওয়ার পরে তার পরিবার আরও সক্রিয়ভাবে বিয়ের আয়োজন শুরু করে।
আরো জানুন >>  নেটিজেন মানে কি ? এর অর্থ ও বিস্তারিত আলোচনা

বাগদত্তা শব্দের ব্যবহারিক দিকঃ

বাংলা সাহিত্যে এবং বাস্তব জীবনে ‘বাগদত্তা’ শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি কেবল একটি সম্পর্কের প্রতীক নয়, বরং এটি সমাজে নারীর অবস্থান, দায়িত্ব এবং ভবিষ্যৎ জীবনের একটি ইঙ্গিত বহন করে।

উপসংহারঃ

‘বাগদত্তা’ শব্দটি শুধুমাত্র একটি সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে না; এটি একটি সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং সামাজিক প্রথার অংশ। এটি বিয়ের পূর্বপ্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলে। বাগদত্তা হওয়া মানে শুধু বিয়ের প্রতিশ্রুতি নয়, বরং এটি একটি নতুন জীবনের সূচনা, যেখানে ভালোবাসা, সম্মান এবং দায়িত্ব একসাথে গাঁথা থাকে।

Leave a Comment