“ইত্তেহাদ” (اتحاد) একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ “ঐক্য”, “একতা” বা “সংহতি”। এটি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। ইত্তেহাদ এমন এক শক্তি, যা মানুষকে একত্রিত করে, বিভক্তির পরিবর্তে মিলনের পথ দেখায়। ইতিহাসে দেখা গেছে, যে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তারা উন্নতি করে; আর যেখানে বিভক্তি দেখা দেয়, সেখানে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। তাই ইত্তেহাদের গুরুত্ব সর্বক্ষেত্রে অপরিসীম।
ইত্তেহাদ শব্দের অর্থ:
“ইত্তেহাদ” শব্দটি এসেছে আরবি “اتحاد” (ittihād) থেকে, যার মূল অর্থ হলো “একত্রীকরণ” বা “সংহতি”। এই শব্দটি বিভিন্ন প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে—
- ব্যক্তিগত জীবনে: নিজস্ব চিন্তা ও মনোভাবকে সংহত করে এগিয়ে যাওয়াকে বোঝায়।
- পারিবারিক জীবনে: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য বোঝায়।
- সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে: সমাজ বা জাতির মধ্যে ঐক্যের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠাকে বোঝায়।
- আন্তর্জাতিক পর্যায়ে: বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাকে বোঝায়।
ইত্তেহাদের গুরুত্ব:
১. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:
ইসলামে ইত্তেহাদ বা ঐক্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনে উল্লেখ আছে—
“তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৩)
এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মুসলিম উম্মাহর জন্য ঐক্য অপরিহার্য। নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর অনুসারীদের সর্বদা সংহতির দিকে আহ্বান করেছেন, যাতে মুসলমানরা বিভেদে না জড়ায়।
২. সামাজিক জীবনে ইত্তেহাদ:
একটি শক্তিশালী সমাজ গঠনের জন্য ইত্তেহাদ অপরিহার্য। পারস্পরিক সহযোগিতা, বোঝাপড়া ও ঐক্যের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি ও উন্নতি আসে। যদি সমাজের মানুষ বিভক্ত হয়, তাহলে সেখানে বিশৃঙ্খলা, দাঙ্গা ও সংঘর্ষ দেখা দেয়।
৩. রাজনৈতিক ও জাতীয় জীবনে ইত্তেহাদ:
একটি রাষ্ট্র বা জাতির উন্নতির জন্য ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে দেখা গেছে, যেখানে জনগণের মধ্যে ইত্তেহাদ ছিল, সেখানে অগ্রগতি ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণের ঐক্য দেশকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইত্তেহাদ:
ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা উন্নতির পথ তৈরি করে। একটি প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে যদি সকল সদস্য একসাথে কাজ করে, তাহলে তা দ্রুত উন্নতি লাভ করে।
ইত্তেহাদের অভাবের ফলাফল:
যেখানে ইত্তেহাদ নেই, সেখানে বিশৃঙ্খলা, দুর্বলতা ও অবনতি দেখা দেয়। জাতিগত সংঘাত, পারিবারিক কলহ, রাজনৈতিক বিভাজন ও আন্তর্জাতিক বিরোধের মূল কারণ হলো ঐক্যের অভাব। বিভক্তি মানুষকে পিছিয়ে দেয়, সমাজকে দুর্বল করে এবং রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
উপসংহারঃ
ইত্তেহাদ শুধুমাত্র একটি শব্দ নয়, এটি একটি শক্তি, যা মানুষকে একত্রিত করে এবং উন্নতির পথ দেখায়। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বপর্যায়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ইত্তেহাদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঐক্য বজায় রাখা উচিত, যাতে আমরা একসাথে এগিয়ে যেতে পারি এবং উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারি।