[wpseo_breadcrumb]

জুম্মা শব্দের অর্থ কি ?

“জুম্মা” (Jumma) শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে এবং এটি ইসলামের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত একটি বিশেষ শব্দ। “জুম্মা” শব্দের মূল অর্থ হলো “সমবেত হওয়া” বা “সমাবেশ”। এটি শুক্রবার দিনকে নির্দেশ করে, যেদিন মুসলমানরা মসজিদে গিয়ে সমবেতভাবে বিশেষ নামাজ আদায় করেন, যা “জুম্মার নামাজ” নামে পরিচিত। এই নামাজ ইসলামের পাঁচটি প্রধান স্তম্ভের অন্তর্ভুক্ত না হলেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বলে গণ্য হয়।

“জুম্মা” শব্দের উৎস :

“জুম্মা” শব্দটি আরবি ভাষায় “الجُمْعَة” (আল-জুম’আহ) থেকে এসেছে। এখানে “জুম’আহ” শব্দটি আসে “জাম’আহ” (جمع) ক্রিয়া মূল থেকে, যার অর্থ একত্রিত হওয়া বা সমবেত হওয়া। ইসলামিক পরিভাষায়, “জুম’আহ” শব্দটি সেই দিনকে বোঝায়, যেদিন মুসলমানরা মসজিদে জুম্মার নামাজের জন্য একত্রিত হন।

জুম্মার গুরুত্ব ও তাৎপর্য :

ইসলামে, শুক্রবারের গুরুত্ব অত্যধিক। এটি এমন একটি দিন, যাকে ইসলামিক পবিত্র দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কুরআনে এবং হাদিসে শুক্রবারের বিশেষ তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“হে মুমিনগণ! জুম্মার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত অগ্রসর হও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক, যদি তোমরা বুঝ।” (সূরা আল-জুম’আ, আয়াত ৯)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, জুম্মার দিনে যখন নামাজের আহ্বান করা হয় (আজান), তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজকর্ম ইত্যাদি বন্ধ করে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করতে হবে।

ইসলামে শুক্রবারের বিশেষ তাৎপর্য :

ইসলামিক ইতিহাস এবং হাদিস থেকে জানা যায় যে, শুক্রবারকে “সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ দিনটিকে এমন একটি দিন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেদিন পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং কেয়ামতও এই দিনেই সংঘটিত হবে বলে বিশ্বাস করা হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:

আরো জানুন >>  ট্রাইবুনাল মানে কি এবং ট্রাইবুনালের কাজ কি

“শুক্রবার এমন একটি দিন, যে দিনে সূর্য উদিত হয়, এই দিনটি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনে হযরত আদম (আ.) সৃষ্টি হন এবং এই দিনেই তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন এবং পৃথিবীতে প্রেরিত হন।” (সহীহ মুসলিম)

জুম্মার নামাজ :

“জুম্মা” শব্দটির আরেকটি প্রধান অর্থ হলো “জুম্মার নামাজ”। এটি একটি বিশেষ নামাজ, যা প্রতি শুক্রবারে মুসলমানদের উপর ফরজ। অন্য দিনের যেকোনো নামাজের চেয়ে এটি বিশেষ, কারণ এ নামাজের জন্য খুৎবা (বক্তৃতা) দেওয়া হয়, যেখানে ইমাম ধর্মীয় উপদেশ, শিক্ষা এবং নির্দেশনা প্রদান করেন। খুৎবার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, যা “জুম্মার নামাজ” নামে পরিচিত।

জুম্মার নামাজের জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়া বাধ্যতামূলক। হাদিসে বলা হয়েছে:

“যে ব্যক্তি জুম্মার নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়, তার অন্তরে একটি মোহর লাগিয়ে দেওয়া হবে এবং সে মুনাফিকদের মধ্যে গণ্য হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিজি)

এই হাদিসটি থেকে বোঝা যায়, জুম্মার নামাজের গুরুত্ব কতটা গভীরভাবে ইসলামের মধ্যে নিহিত।

জুম্মা এবং সামাজিক একত্রিকরণ :

“জুম্মা” শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। জুম্মার নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি সুযোগ, যেখানে তারা সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে একত্রিত হয়ে পরস্পরকে দেখতে পারেন, সামাজিক যোগাযোগ করতে পারেন এবং ধর্মীয় আলোচনা ও শিক্ষা লাভ করতে পারেন। এটি এক ধরনের সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আরো জানুন >>  অপরাহ্ন অর্থ কি

শুক্রবারের অন্যান্য আমল :

ইসলামে জুম্মার দিন শুধু নামাজের জন্যই নয়, বরং অন্যান্য বিশেষ আমলের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে কিছু বিশেষ ইবাদত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেমন:

সুরা কাহফ তিলাওয়াত: জুম্মার দিন সূর্যাস্তের আগে সুরা কাহফ পড়া সুন্নত।
দরুদ পাঠ: জুম্মার দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
দোয়া কবুল হওয়া: হাদিসে বর্ণিত আছে যে, শুক্রবারের কিছু বিশেষ সময় আছে, যখন আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন। এজন্য মুসলমানরা এ দিন বেশি করে দোয়া করে।

উপসংহার :

“জুম্মা” শব্দটি ইসলামের একটি বিশেষ ও পবিত্র দিনকে বোঝায়, যা ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এদিনে জুম্মার নামাজের জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়া শুধু ইবাদতের অংশ নয়, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্য, সংহতি ও সামাজিক বন্ধনের প্রতীকও।

Leave a Comment