কুলটা শব্দটি বাংলা ভাষায় প্রায়শই ব্যবহৃত হয় এবং এটি একটি নেতিবাচক অর্থ বহন করে। কুলটা বলতে সাধারণত এমন নারীকে বোঝানো হয়, যার চরিত্র বা আচরণ সমাজের প্রচলিত নৈতিকতা ও শিষ্টাচারের বিপরীত। এটি একটি অবমাননাকর শব্দ এবং একে কখনোই কোনো মহিলার প্রতি শ্রদ্ধার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত নয়।
কুলটা শব্দটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত একটি পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রতিফলন, যেখানে নারীদের যৌনতা ও চরিত্র সম্পর্কে কড়া নিয়ম আরোপ করা হয়। একজন নারীর পোশাক, আচরণ, এবং জীবনযাপনের পদ্ধতি যদি সামাজিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে তাকে কুলটা বলে আখ্যা দেওয়া হতে পারে।
কুলটা শব্দটি মূলত সংস্কৃত ভাষার ‘কুল’ এবং ‘অটা’ শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘কুল’ শব্দের অর্থ পরিবার বা বংশ এবং ‘অটা’ অর্থ যিনি এসব মানেন না বা অনুসরণ করেন না। অর্থাৎ, যিনি নিজের পরিবার বা বংশের মর্যাদা রক্ষা করেন না, তাকেই কুলটা বলা হয়।
এই শব্দের ব্যবহার সমাজে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি নারীদের প্রতি একটি বৈষম্যমূলক মনোভাব প্রচার করে এবং তাদের স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। নারীর জীবনযাপন, পোশাক, এবং আচরণের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়। এটি নারী স্বাধীনতার পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীদের প্রতি এই ধরনের শব্দ ব্যবহার অনেক পুরানো হলেও, বর্তমানে নারীরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। তারা নিজেদের অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন এবং সমাজের এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন।
নারী স্বাধীনতা এবং সমান অধিকারের পক্ষে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও, এখনো অনেক স্থানে নারীদের এই ধরনের শব্দের মাধ্যমে হেয় করা হয়। সমাজে নারীর মর্যাদা এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে এই ধরনের অবমাননাকর শব্দের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নারীদের প্রতি সম্মান এবং সমান আচরণ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের ভাষা এবং মনোভাবের পরিবর্তন আনতে হবে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীদের প্রতি এই ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করতে হবে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের প্রতি সম্মান এবং সমান আচরণের প্রচলন করতে হবে। শুধু আইনী পদক্ষেপই নয়, মানসিকতার পরিবর্তনও খুব জরুরি।
আরো জানুনঃ>>> অরক্ষণীয়া শব্দের অর্থ কি
নারী স্বাধীনতা এবং সমান অধিকারের জন্য আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কুলটা এবং এর মতো অন্যান্য নেতিবাচক শব্দের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং নারীদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদার সাথে আচরণ করতে হবে। এভাবেই আমরা একটি ন্যায্য এবং সমান সমাজ গঠন করতে পারব, যেখানে প্রত্যেক নারী তার পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা উপভোগ করতে পারবে।