মেরাজ শব্দের অর্থ কি

“মেরাজ” (আরবি: معراج) শব্দটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ঘটনা এবং ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ। এটি মূলত নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক অলৌকিক সফরকে বোঝায়, যেখানে তিনি সশরীরে এবং আত্মিকভাবে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আরশে আজিমে গমন করেন। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, এটি রাতের বেলা সংঘটিত হয়েছিল, যা কুরআন ও হাদিসে বিশদভাবে বর্ণিত।

শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ:

“মেরাজ” শব্দটি আরবি “উরুজ” (عروج) ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হলো “উর্ধ্বগমন”, “আরোহন”, বা “উচ্চতায় আরোহণ করা”। ইসলামি পরিভাষায় “মেরাজ” বোঝায় সেই বিশেষ রাত, যখন নবী করিম (সাঃ) আকাশের সপ্তম স্তর অতিক্রম করে সৃষ্টিকর্তার নিকট পৌঁছেছিলেন।

মেরাজের ধর্মীয় গুরুত্ব:

মেরাজ হলো ইসলামের পবিত্র ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি, যা নবীজির নবুওয়াতের প্রমাণ ও মুসলিমদের জন্য শিক্ষণীয় একটি অধ্যায়। এটি মুসলিমদের জন্য ঈমান ও আমলের একটি অনুপ্রেরণা।

মেরাজের দুটি ধাপ:

১. ইসরা (الإسراء):
এটি হলো মেরাজের প্রথম ধাপ, যেখানে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) পর্যন্ত গমন করেন। এটি কুরআনে বর্ণিত:

“পবিত্র তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা নিয়ে গেলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়, যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছি।”
(সূরা আল-ইসরা: ১)

২. মেরাজ:
ইসরার পরে নবীজিকে আসমানের উপরিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং উম্মতের জন্য সালাতের আদেশ লাভ করেন।

মেরাজের ঘটনা:

মেরাজের সময় নবীজিকে বিশেষ বাহন বুরাক-এ চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সফরের সময় তিনি বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন এবং আল্লাহর নির্দেশ গ্রহণ করেন।

আরো জানুন >>  কুলটা শব্দের অর্থ কি ?

সাত আসমানের ভ্রমণ:

মেরাজের সময় নবীজিকে সাত আসমানের বিভিন্ন স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি স্তরে তিনি বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

১. প্রথম আসমানে আদম (আঃ)।
২. দ্বিতীয় আসমানে ঈসা (আঃ) ও ইয়াহইয়া (আঃ)।
৩. তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আঃ)।
৪. চতুর্থ আসমানে ইদ্রিস (আঃ)।
৫. পঞ্চম আসমানে হারুন (আঃ)।
৬. ষষ্ঠ আসমানে মূসা (আঃ)।
৭. সপ্তম আসমানে ইব্রাহিম (আঃ)।

এই সফরের শীর্ষে নবীজিকে “সিদরাতুল মুনতাহা” পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়।

মেরাজের শিক্ষা:

মেরাজের ঘটনা মুসলিমদের জন্য একাধিক শিক্ষণীয় বার্তা বহন করে:
১. সালাতের গুরুত্ব:
মেরাজের সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলিমদের জন্য ফরজ করা হয়। এটি নির্দেশ করে যে নামাজ মুসলিমদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

২. আল্লাহর প্রতি আস্থা:
নবীজির এই অলৌকিক ভ্রমণ দেখায় যে আল্লাহ যখন কাউকে কিছু আদেশ করেন, তিনি সেই আদেশ বাস্তবায়নের সকল উপায়ও সৃষ্টি করেন।

৩. অন্তরের প্রশান্তি:
মেরাজ প্রমাণ করে, জীবনের কঠিন সময়েও যদি আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা হয়, তবে তিনি নিজে পথ দেখাবেন।

কুরআন ও হাদিসে মেরাজের উল্লেখ:

কুরআনে:

মেরাজের ঘটনা সূরা আল-ইসরা (সূরা বনি ইসরাইল) এবং সূরা আন-নাজমে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

হাদিসে:

মেরাজের বিস্তারিত বর্ণনা নবীজির বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়। সাহাবিরা নবীজির মুখ থেকে এই অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা শুনে তা সংরক্ষণ করেন।

মেরাজের প্রভাব:

মেরাজ শুধু নবীজির জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়, বরং এটি মুসলিমদের জন্য ঈমানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এটি প্রমাণ করে যে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করেন এবং তাদের সাহায্যের জন্য সব সময় প্রস্তুত।

আরো জানুন >>  রিসালাত শব্দের অর্থ কি

উপসংহার:

মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নবুওয়াতের শক্তি এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর গভীর আত্মসমর্পণের প্রকাশ। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুপ্রেরণার একটি উৎস এবং একটি নিদর্শন, যা আল্লাহর ওপর ভরসা ও তাঁর প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।

Leave a Comment