সেহরি শব্দের অর্থ কি – অবশ্যই সবার জানা উচিৎ

“সেহরি” শব্দটি মুসলিম সমাজে একটি অত্যন্ত পরিচিত শব্দ, বিশেষত রমজান মাসে। এটি মূলত ইসলামী উপবাস বা রোজার সঙ্গে জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেহরি হল সুবহে সাদিকের পূর্বে খাওয়ার সেই বিশেষ সময়, যা মুসলমানদের রোজা রাখার প্রস্তুতি হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। এই প্রবন্ধে আমরা সেহরি শব্দের অর্থ, ইসলামে এর গুরুত্ব, স্বাস্থ্যগত দিক, এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশদভাবে আলোচনা করব।

সেহরি শব্দের অর্থ :

“সেহরি” শব্দটি আরবি ভাষার “سُحُور” (সুহুর) শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো ভোরের পূর্বে খাওয়া বা পান করা। এটি ইসলামিক পরিভাষায় সেই খাবার বোঝায়, যা একজন মুসলমান রোজা রাখার পূর্বে ফজরের আগে খেয়ে নেন। “সুহুর” শব্দটি কুরআন ও হাদিসে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি রোজাদারদের জন্য সুন্নত হিসেবে বিবেচিত।

ইসলামে সেহরির গুরুত্ব :

সেহরি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) সেহরি খাওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন:

“তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯২৩)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে সেহরি শুধুমাত্র শারীরিক শক্তির জন্যই নয়, বরং আত্মিক ও আধ্যাত্মিক বরকতের কারণও বটে।

সেহরির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা :

সেহরি শুধুমাত্র ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অত্যন্ত উপকারী।

১. শরীরের শক্তি বজায় রাখা: দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সেহরি খেলে এটি প্রতিরোধ করা যায় এবং শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি বজায় থাকে।
২. পানিশূন্যতা রোধ: রোজার সময় পানি পান করা যায় না, তাই সেহরির সময় পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
3. পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী: সেহরি একটি স্বাস্থ্যকর উপায়ে গ্রহণ করলে এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
4. উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সহায়ক: সেহরিতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলে এটি রক্তের সুগার লেভেল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

আরো জানুন >>  লংমার্চ মানে কি

সেহরি সম্পর্কিত কিছু ইসলামিক বিধান :

ইসলামে সেহরি খাওয়া সুন্নত, তবে এটি ফরজ নয়। অর্থাৎ, কেউ যদি সেহরি না খেয়ে রোজা রাখেন, তবুও তার রোজা সহিহ হবে। তবে রাসুল (সা.) উৎসাহ দিয়েছেন সেহরি খাওয়ার জন্য, কারণ এতে বরকত রয়েছে।

হাদিসে এসেছে:
“আমাদের (মুসলমানদের) এবং আহলে কিতাবদের (ইহুদি ও খ্রিস্টানদের) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১০৯৬)

এটি প্রমাণ করে যে সেহরি শুধু শারীরিক শক্তির জন্যই নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহন করে।

সেহরির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক :

বিভিন্ন মুসলিম দেশে সেহরির সময় বিভিন্ন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশীয় অঞ্চলে সেহরির সময় বিশেষ কিছু খাবার খাওয়ার রীতি রয়েছে, যেমন খেজুর, ফলমূল, দুধ, রুটি, ভাত, ডাল ইত্যাদি।

মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে সেহরির সময় বিশেষ “মুয়াজ্জিন” বা ঢোলওয়ালারা রাস্তায় ঘুরে মানুষকে সেহরির জন্য জাগিয়ে দেন। এটি ঐতিহাসিকভাবে বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে এবং আজও অনেক জায়গায় প্রচলিত রয়েছে।

সেহরি গ্রহণের কিছু সুন্নত ও করণীয় :

১. শেষ সময় পর্যন্ত দেরি করা: রাসুল (সা.) সেহরি বিলম্ব করে খেতে উৎসাহিত করেছেন, যাতে রোজা রাখার জন্য দীর্ঘক্ষণ শক্তি সংরক্ষণ করা যায়।
২. হালাল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: সুস্থ ও দীর্ঘস্থায়ী উপবাসের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
3. অতিরিক্ত না খাওয়া: সেহরিতে বেশি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।
4. সেহরির পর দোয়া করা: সেহরি গ্রহণ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত, যাতে রোজা সফল হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

আরো জানুন >>  নদ ও নদীর পার্থক্য কি ?

উপসংহার :

সেহরি কেবলমাত্র খাবার গ্রহণের সময় নয়, এটি একটি বরকতময় আমল এবং ইসলামের অন্যতম সুন্নত। এটি শারীরিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যগতভাবে এটি রোজাদারদের জন্য উপকারী এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি রোজার বরকত বৃদ্ধি করে। তাই, রোজার সময় সেহরি খাওয়ার অভ্যাস করা এবং সুন্নত অনুযায়ী তা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কল্যাণকর।

Leave a Comment