সপত্নী শব্দের অর্থ হলো সহধর্মিণী, বা যিনি একই স্বামীর সাথে অন্য কোনো স্ত্রীর মতো সহ-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন। বাংলা ভাষায় সপত্নী শব্দটি সাধারণত প্রথম স্ত্রীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যখন তার স্বামীর দ্বিতীয় বা অন্য কোনো স্ত্রী থাকে।
সপত্নী শব্দটির মূল উদ্ভব সংস্কৃত ভাষা থেকে। সংস্কৃত ভাষায় ‘স’ শব্দটি ‘সহ’ অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং ‘পত্নী’ শব্দটি ‘স্ত্রী’ বা ‘ধর্মপত্নী’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই দুই শব্দের মিলনে ‘সপত্নী’ শব্দের উৎপত্তি ঘটে, যার অর্থ ‘সহ-স্ত্রী’।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট :
সপত্নী সম্পর্কের ধারণা সমাজে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।
প্রাচীনকালে :
প্রাচীন ভারতীয় সমাজে বহুবিবাহ একটি প্রচলিত প্রথা ছিল। রাজা ও সম্রাটদের একাধিক স্ত্রী রাখার প্রচলন ছিল, যা তাঁদের সামাজিক অবস্থান ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত। এই ক্ষেত্রে, প্রথম স্ত্রীকে সাধারণত গৃহের প্রধান হিসেবে দেখা হত এবং অন্য স্ত্রীরা তাঁকে সপত্নী হিসেবে সম্মান করত।
আধুনিক সমাজ :
আধুনিক সমাজে বহুবিবাহ আইনগতভাবে অনেক দেশে নিষিদ্ধ, এবং সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতাও কমে গেছে। তবে কিছু কিছু সমাজ ও সংস্কৃতিতে এখনো বহুবিবাহের প্রচলন রয়েছে, বিশেষ করে আফ্রিকার কিছু অংশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু এলাকায়।
সপত্নী সম্পর্কের সামাজিক প্রভাব :
সপত্নী সম্পর্ক অনেক সময় ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করে।
ব্যক্তিগত সম্পর্ক :
বহুবিবাহের ক্ষেত্রে সপত্নী সম্পর্ক অনেক সময় পারিবারিক জীবনে দ্বন্দ্ব ও অশান্তির সৃষ্টি করে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় স্ত্রীর সম্পর্ক অনেক সময় প্রতিযোগিতা ও ঈর্ষার জন্ম দেয়।
সন্তানদের ওপর প্রভাব :
সপত্নী সম্পর্ক সন্তানদের ওপরও প্রভাব ফেলে। সন্তানরা অনেক সময় মায়েদের দ্বন্দ্বের শিকার হয়, যা তাদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আরো জানুনঃ>>> ভ্রাতুষ্পুত্র মানে কি
ধর্মীয় ও আইনগত দিক :
বিভিন্ন ধর্মে বহুবিবাহ ও সপত্নী সম্পর্কের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
হিন্দু ধর্ম :
হিন্দু ধর্মে বহুবিবাহ প্রচলিত থাকলেও আধুনিক হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ।
ইসলাম :
ইসলামে পুরুষদের একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি রয়েছে, তবে এর জন্য কিছু শর্ত রয়েছে যেমন স্ত্রীদের মধ্যে সমান অধিকার ও সুশাসন বজায় রাখা।
আইনগত প্রেক্ষাপট :
বিভিন্ন দেশে বহুবিবাহের আইনগত বৈধতা ভিন্ন ভিন্ন। কিছু দেশে এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, আবার কিছু দেশে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে এটি বৈধ।
সমাপনী মন্তব্য :
সপত্নী সম্পর্কের ধারণা বিভিন্ন সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, এবং আইনগত প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন রূপে বিদ্যমান। আধুনিক সমাজে এর প্রভাব কমে আসছে, তবে এর জটিলতা ও সামাজিক প্রভাব এখনো অনেক স্থানে বিদ্যমান। সপত্নী সম্পর্কের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ও ব্যক্তিগত প্রভাবগুলো গভীরভাবে বোঝা এবং মূল্যায়ন করা জরুরি, যেন আমরা একটি সমতাপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি।