ইসলাম ধর্মে তাসবীহ ও জিকিরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মুসলিমগণ নামাজসহ বিভিন্ন ইবাদতে আল্লাহর গুণগান করে থাকেন। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ তাসবীহ হলো “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা”। এটি মূলত সিজদার সময় পাঠ করা হয় এবং এর অর্থ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই বাক্যের প্রতিটি শব্দের মধ্যে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমার পরিচয় রয়েছে।
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা – এর অর্থ :
আরবি: سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা
বাংলা অর্থ: “পরম পবিত্র আমার প্রতিপালক, যিনি সর্বোচ্চ।”
এখানে তিনটি মূল শব্দ রয়েছে, যেগুলোর বিশ্লেষণ করলে এর গভীরতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়—
- সুবহানা (سُبْحَانَ):
- এই শব্দটি এসেছে “سبح” (সাবাহা) মূল ধাতু থেকে, যার অর্থ হলো পবিত্রতা ঘোষণা করা।
- সুবহান অর্থ “শূন্যতাপূর্ণ পবিত্রতা”, অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সমস্ত অপূর্ণতা, সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা থেকে মুক্ত।
- যখন আমরা বলি “সুবহানাল্লাহ”, তখন আমরা বলছি, “আল্লাহ সমস্ত দোষত্রুটি থেকে মুক্ত, তিনি পরম পবিত্র।”
- রাব্বি (رَبِّيَ):
- রাব্বি শব্দটি এসেছে “রব্ব” (رَبّ) শব্দ থেকে, যার অর্থ প্রতিপালক, পালনকর্তা, অভিভাবক, এবং পথপ্রদর্শক।
- আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতিপালক এবং তিনি সব কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণকারী।
- এখানে “রাব্বি” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ “আমার প্রতিপালক”, যা ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার অনুভূতি জাগ্রত করে।
- আলা (الأَعْلَى):
- “আলা” শব্দের অর্থ হলো “সর্বোচ্চ, উন্নত, মহান”।
- আল্লাহ সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তিনি সৃষ্টিজগতের সবার উপরে অবস্থান করেন।
গুরুত্ব ও ফজিলত :
১. নামাজে এর ব্যবহার:
- মুসলিমদের নামাজের সময় সিজদার অবস্থায় এই তাসবীহ পাঠ করা হয়।
- হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সা.) সিজদার সময় বারবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” বলতেন।
- সিজদার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে কাছাকাছি যায়, তাই এই সময়ে আল্লাহর সর্বোচ্চ মর্যাদা ও পবিত্রতা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. আল-কুরআনে ‘আলা’ শব্দের ব্যবহার:
আল্লাহ তাআলা কুরআনে নিজেকে “আলা” বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, সুরা আল-আলা (সূরা ৮৭) শুরু হয়েছে এই আয়াত দিয়ে—
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
“তোমার সর্বোচ্চ মহান প্রতিপালকের নাম পবিত্র ঘোষণা করো।”
এটি এই বাক্যের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
৩. আল্লাহর প্রশংসা ও বান্দার আনুগত্য:
- এই তাসবীহ পাঠ করলে বান্দা আল্লাহর সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও মহত্ত্ব স্বীকার করে।
- এটি আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের এক অনন্য মাধ্যম।
- এতে বান্দার বিনয় ও আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রকাশ ঘটে।
সুবহানা রাব্বিয়াল আলা বলার উপকারিতা:
✅ আল্লাহর গুণগান করা হয়: এই বাক্য দ্বারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, মহিমা ও পবিত্রতা প্রকাশ করা হয়।
✅ নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়: সিজদায় এই তাসবীহ পাঠ করার ফলে আত্মার প্রশান্তি ও একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়।
✅ গুনাহ মাফের সুযোগ: আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করলে আল্লাহ বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন।
✅ আখিরাতের জন্য সওয়াব: প্রতিবার পাঠ করার মাধ্যমে জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়া যায়।
উপসংহার :
“সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” শুধুমাত্র একটি বাক্য নয়, বরং এটি আল্লাহর মহিমা প্রকাশের অন্যতম শক্তিশালী তাসবীহ। এটি আমাদের নামাজ, জিকির ও আত্মশুদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এই তাসবীহের অর্থ ও তাৎপর্য বুঝে পাঠ করেন, তারা হৃদয় থেকে আল্লাহর প্রশংসা করেন। তাই আমাদের উচিত, শুধু মুখে উচ্চারণ না করে এর গভীরতা উপলব্ধি করা এবং আমাদের জীবনে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বকে সর্বদা স্বীকার করা।