ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ, যা মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। তবে ফরজ নামাজের পাশাপাশি কিছু নফল নামাজও রয়েছে, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে তারাবি নামাজ রমজান মাসে পড়া হয় এবং এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
তারাবি নামাজের অর্থ ও পরিচয় :
“তারাবি” (تراويح) শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ বিশ্রাম গ্রহণ করা বা বিরতি নেওয়া। এটি মূলত “তারবিহা” (ترويحة) শব্দের বহুবচন, যার অর্থ একটি দীর্ঘ নামাজের মাঝে স্বল্প বিশ্রাম নেওয়া। কারণ, তারাবি নামাজ দীর্ঘ হয় এবং সাধারণত প্রতি চার রাকাত পর মুসল্লিরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন, তাই একে “তারাবি” বলা হয়।
এই নামাজ মূলত রমজান মাসে এশার নামাজের পর ৮, ১০ বা ২০ রাকাতের একটি বিশেষ নফল নামাজ, যা মুসলমানরা সওয়াবের আশায় আদায় করেন। এটি এককভাবে বা জামাতে পড়া যায়, তবে জামাতে পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
তারাবি নামাজের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট :
তারাবি নামাজের সূচনা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকেই।
- প্রথম দিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এক রাতে মসজিদে জামাতে তারাবি পড়ান, পরের রাতে মুসল্লির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
- তৃতীয় রাতেও তিনি নামাজ পড়ান, কিন্তু চতুর্থ রাতে তিনি আর মসজিদে আসেননি।
- পরে সাহাবিরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি মসজিদে এসে নামাজ পড়তে পারতাম, তবে আমি আশঙ্কা করলাম, আল্লাহ না আবার এই নামাজকে তোমাদের জন্য ফরজ করে দেন।”
এরপর খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতের সময় তারাবি নামাজ জামাতে পড়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং এটি ২০ রাকাতে স্থায়ী হয়। আজও মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে ৮, ১০ বা ২০ রাকাত তারাবি পড়া হয়।
তারাবি নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব :
তারাবি নামাজ রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
✅ হাদিসের আলোকে ফজিলত:
১. গুনাহ মাফ হয়:
রাসূল (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসে তারাবি নামাজ আদায় করবে, তার আগের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে।”
(বুখারি, মুসলিম)
২. কিয়ামুল লাইলের মর্যাদা:
তারাবি নামাজ রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল-এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন,
“যারা রাত্রিতে নামাজের জন্য দাঁড়ায়, তারা আমার নৈকট্য লাভ করে।”
৩. শরীর ও আত্মার প্রশান্তি:
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কুরআন তেলাওয়াত ও শ্রবণ করা আত্মার প্রশান্তি এনে দেয়।
তারাবি নামাজের নিয়ম :
✅ নিয়ত:
- “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করছি।”
✅ রাকাত সংখ্যা:
- সাধারণত ২০ রাকাত পড়া হয়, তবে ৮ বা ১০ রাকাতও পড়া যায়।
✅ কুরআন তেলাওয়াত:
- তারাবিতে কুরআনের খতম করা মুস্তাহাব।
✅ দোয়া ও জিকির:
- প্রতি ৪ রাকাতের পর সংক্ষিপ্ত বিশ্রাম ও দোয়া পড়া হয়।
উপসংহার :
তারাবি নামাজ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি কুরআনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার সুযোগ দেয় এবং আত্মিক প্রশান্তি আনে। তাই আমাদের উচিত সঠিক নিয়মে, আন্তরিকতা ও একাগ্রতার সাথে তারাবি নামাজ আদায় করা, যাতে আমরা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করতে পারি।