ইজতেমা অর্থ কি

ইজতেমা (Ijtima) একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো সমাবেশ, জমায়েত বা একত্রিত হওয়া। এটি মূলত ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণত ধর্মীয় সমাবেশ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুশীলন এবং ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের অন্যতম মাধ্যম। ইজতেমার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ উদাহরণ হলো বিশ্ব ইজতেমা, যা বাংলাদেশে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান একত্রিত হয়ে ইসলামী শিক্ষা, দোয়া এবং আত্মশুদ্ধির জন্য অংশগ্রহণ করেন।

ইজতেমার শব্দমূল ও ব্যুৎপত্তি :

‘ইজতেমা’ শব্দটি আরবি ভাষার “جمع” (জামা) ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো একত্রিত হওয়া বা একসাথে জড়ো হওয়া। এটি “إجتماع” (ইজতেমা) শব্দে পরিণত হয়েছে, যার অর্থ হলো “সমাবেশ” বা “একত্রিত হওয়া”। মূলত, যে কোনো ধরনের সম্মেলন, সমাবেশ, বা জমায়েত বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করা যায়। তবে ইসলামী প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষভাবে ধর্মীয় সমাবেশ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

ইজতেমার গুরুত্ব :

ইজতেমা শুধুমাত্র একটি সাধারণ ধর্মীয় সমাবেশ নয়; এটি মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ইজতেমার মাধ্যমে মানুষ ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে এবং তাদের জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী পরিচালিত করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়। নিচে ইজতেমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:

১. ধর্মীয় শিক্ষা ও তাবলিগ:

ইজতেমার মূল লক্ষ্য হলো ইসলামের শিক্ষা প্রচার করা। এই সমাবেশে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা ইসলামিক জীবনব্যবস্থা, নৈতিকতা, ইবাদত-বন্দেগি, এবং সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। তাবলিগ জামাতের অন্যতম কার্যক্রম হিসেবে এটি ব্যাপক পরিচিত, যেখানে মুসলমানদের ইসলামের মৌলিক শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

আরো জানুন >>  আধ্যাত্মিক অর্থ কি ? দেখুন চুলছেড়া বিশ্লেষণ

২. দোয়া ও আত্মশুদ্ধি:

ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাঁদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলামের সঠিক চর্চার জন্য দোয়া করেন। এটি আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যেখানে মানুষ নিজেদের পাপ ও ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে।

৩. ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রসার:

ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন দেশ, অঞ্চল এবং সামাজিক স্তর থেকে আসেন। এখানে ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, রাজা-প্রজা সবাই একত্রিত হন, যা ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রকৃত উদাহরণ তুলে ধরে।

৪. সামাজিক ও নৈতিক উন্নয়ন:

ইজতেমার আলোচনাগুলো মানুষের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়। মানুষ যেন সৎ পথে চলতে পারে, অন্যদের সাহায্য করতে পারে এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করতে পারে, সেসব বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়।

বিশ্ব ইজতেমা :

বিশ্ব ইজতেমা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েতগুলোর মধ্যে একটি। এটি মূলত বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে লাখ লাখ মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। সাধারণত তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইসলামী বয়ান, ইবাদত-বন্দেগি, এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়। বিশ্ব ইজতেমার মূল আয়োজন করে তাবলিগ জামাত, যা একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন।

উপসংহার :

ইজতেমা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় সমাবেশ নয়; এটি ইসলামের শিক্ষা প্রচার, আত্মশুদ্ধি, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সামাজিক কল্যাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি মুসলিম সমাজের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে এবং আল্লাহর পথে চলার জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ইজতেমা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পার্থিব জীবনের চেয়ে আখিরাতের জীবনই গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমাদের উচিত ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা।

Leave a Comment